মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: মাসুদ আল মাহাদী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ; স্বপ্ন দেখেছিলেন, নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন । পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। বছর খানেকের অক্লান্ত প্রস্তুতির পর সম্প্রতি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় ভালো ফল করছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরিটা আর পাওয়া হলো না তার।
আজ, ২৭ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বেলা দুইটার কিছু পর রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকার একটি মেস থেকে মাসুদ আল মাহাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষার্থীর রেজাল্ট ভালোই ছিল ।পাশাপাশি, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায়সংগত আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের এ ছাত্র।
মাসুদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে।মাসুদের বন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাবেক ছাত্র আবু সাঈদ তাঁর পাশের কক্ষেই থাকতেন। তিনি জানান, ‘আমার সঙ্গে সর্বশেষ দুপুর ১২টার দিকে মাসুদ আল মাহাদীর কথা হয়। স্কসটেপ দরকার হওয়ায় আমি তার কক্ষে স্কসটেপ আনতে গিয়েছিলাম। দেখলাম, সে ঘুমাচ্ছে। আমি বললাম, “তোর তো পরীক্ষা, এখন ঘুমাচ্ছিস কেন?” সে বলল যে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে, এখন একটু ঘুমাবে। পরে স্কসটেপ আমার কক্ষে এনে কাজ শেষ করে ১২টা ১০ কি ১৫ মিনিটের দিকে আমি তার কক্ষে গিয়ে দিয়ে আসি।
এরপর বেলা দুইটার দিকে মাসুদ আল মাহাদীর রুমমেটরা এসে আমাকে বলে, “ভাই, তাড়াতাড়ি একটু আসুন, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে।” গিয়ে দেখলাম, তার কক্ষের দরজাটি আটকানো। অনেকবার ডাকার পরও সে দরজা খুলছে না। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম যে তার দেহটি গামছা দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর অন্যান্য কক্ষের সবাই আসে। তখন দরজা ভেঙে আমরা বোঝার চেষ্টা করি, সে জীবিত আছে কি না। পরে আমরা বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে জানাই এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানাই। সে পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল, কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করিনি।’
ঘটনাস্থলে পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি আটতলা। এর তিনতলা পর্যন্ত বিভিন্ন অফিস। পাঁচতলা থেকে বাকি তলাগুলোতে ২৫০ জনের মতো বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী মেস করে থাকেন। যিনি মারা গেছেন, তাঁর কক্ষে তিনিসহ মোট তিনজন থাকতেন। অন্য দুজন কোনো একটি বেসরকারি চাকরি করেন, পাশাপাশি সরকারি বড় চাকরির চেষ্টা করছেন। সকালে তাঁরা কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। মাসুদ আল মাহাদী এখানে এসেছেন তিন মাস আগে। দুপুর ১২টার দিকে সর্বশেষ পাশের কক্ষের একজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। দুইটার দিকে অন্য দুই রুমমেট ফিরে এলে দেখতে পান, কক্ষের ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মেসমেটদের বক্তব্য অনুযায়ী পরে তাঁরা অন্যদের ডাকেন। অন্যরা আসার পর দরজা ভেঙে তাঁরা ওই কক্ষে ঢোকেন। তাঁদের কাছে যখন মনে হয়, মাসুদ আল মাহাদী আর বেঁচে নেই, তখন তাঁরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে আমরা খবর পেয়ে এখানে আসি। এখন সুরতহাল চলছে, পরে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গেও পাঠানো হবে। এরপর পরিষ্কার হবে যে তিনি ঠিক কীভাবে মারা গেছেন। তার ওপর ভিত্তি করে এবং আনুষঙ্গিক-পারিপার্শ্বিক সবকিছু দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’